বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান-ছুটিতে ঘুরতে যাবেন যেখানে, যেভাবে


বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানসমূহ যেখানে আমাদের অবসর সময় গুলোতে ঘুরতে বা ভ্রমণ করতে যেতে পারি আজকে আমরা বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

ডিসেম্বর মাস শুরু হতেই আনন্দের জোয়ার সকলের মাঝে। ছোটদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতেই পরিবারে বড়দের অফিস ছুটি নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার দিন। গবেষনায় জানা যায়, ঘুরা-ফেরা বা কোয়াও বেড়াতে গেলে ছোট শিশু কিশোরদের আনন্দের সাথে সাথে মানসিক বিকাশ ঘটে। তাই বছরে এক বা ‍দুইবার ভ্রমণ করা উচিত।

কবির ভাষায়-
“মেঘের কোলো রোদ হোসেছে,
বাদল গেছে টুটি,
আজ আমাদের চুটি ও ভাই,
আজ আমাদের ছুটি।।

ছুটির দিনে মামার দেশে
আম কুড়াতে সুখ,
পাকা জামের শাখায় উঠি,
রঙ্গিন করি মুখ। 

আজ আমাদের ছুটি ও ভাই,
আজ আমাদের ছুটি।”

ডিসেম্বর আসেলেই আমাদের মধ্যে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা একরকম উকি দিতে থাকে। ডিসেম্বরে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে দীর্ঘ সময় ছুটি থাকে আর এই ছুটিতে আমরা দেশ-বিদেশ ঘুরতে যাওয়ার প্লান করে থাকি। আজকে আমরা আলোচনা করবো বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কোথায়  ‍ঘুরতে যেতে পারি এবং কিভাবে ঘুরতে যাওয়ার প্লান করতে পারি।

আমরা যারা শিক্ষার্থী আছি আমাদের কাছে বার্ষিক পরীক্ষা মানেই আনন্দের দিন শুরু। এই আনন্দের দিন গুলোতে আমরা পচ্ছন্দের কাজ গুলো করতে ভালোবাসি। আমদের ভালো লাগার মধ্যে সব থেকে উপরে থাকে ঘুরতে যাওয়া । আমরা নান ভাবে প্লান করে থাকি কোথায় ঘুরতে যাবো, কিভাবে যাবো ইত্যাদি। আপনার এই ভাবনাকে সহজ করতে আমাদের এই আয়োজন।

ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার প্লান

বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতে ডিসেম্বর মাঝামাঝি তাই এই সময় শীতের একটা আমেজ থাকে যা ঘুরার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয় এবং ভ্রমণ অনেক মজার হয়। বিশেষভাবে গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ শীতের সময় আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। কুয়াশা ঢাকা সকাল, খেজুর রস ও আখের গুড় এক অন্য রকম আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করে।
মনের খোরাক মেটাতে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করাটা অনেকটা অমৃতের মত কাজ দেয়। আপত্তি তখনি তৈরি হয় যখন বাজেটের সাথে চাহিদার পার্থক্য দেখা দেয়। কথায় আছে ‘সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ’ অর্থাৎ আপনার সামর্থ অনুয়ায়ী আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে।
নতুন বছরের শুরুটা হোক রঙ্গিন এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমাদের ঘুরতে যাওয়া উচিত। ছুটিতে ঘুরে, আনন্দ করে আমাদের দিন গুলা উপভোগ করা আমাদের সামনের দিন গুলো হয়ে উঠবে আরো আকর্ষণীয়।

আমরা ছুটির দিন গুলোতে ঘুরতে যেতে পারি আমাদের দেশের যে কোন স্থানে অথবা দেশের বাইরেরে কোন আকর্ষণীয় স্পটে। ছুটিতে বেড়াতে বা ঘুরতে গেলে শিশুরা বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানতে পারে, যোগাযোগ তৈরি হয় এবং মানসিক বিকাশ ঘটে থাকে।

বার্ষিক পরীক্ষা বা যে কোন ছুটিতে আমরা গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ বা দেশের বাইরে ঘুরতে যেতে পারি। শহরের ইট পাথরের নগরে যখন আমরা অতিষ্ঠ তখন আমরা গ্রামের যেতেই পারি কিছু ভালো সময় কাটানোর জন্য।

কোথায় ঘুরতে যাবেন ?

ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা যতটা সহজ, তা বাস্তবায়নকরা ততটােই কঠিন। মনের খোরাকের চেয়ে খরচের পরিমান আমাদের সকল প্লান নষ্ট করে দেয়। তাই আমদের ঘুরতে বা ভ্রমণে যেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

গ্রামের ঘুরতে যাওয়াঃ আমরা যারা শহরে থাকি আমাদের জন্য গ্রামের ঘুরতে যাওয়া সব চেয়ে সহজ ও কার্যকর সিদ্ধান্ত হবে। গ্রামে আমাদের আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু থাকে যাদের সাথে বছরে ছুটির দিন গুলো উপভোগ করা আপনার জন্য অনেক ফলপ্রসু হবে।

এছাড়াও যাদের গ্রামে আত্নীয় স্বজন নেই বললে চলে তারা পরিচিত বন্ধু বা বড় ভাই হতে পারে তাদের গ্রামে কিছু দিনের জন্য ঘুরতে যাওয়ার প্লান করা যেতেই পারে। সবই সম্ভব শুধু সাহস করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

দেশের আকর্ষণীয় স্পটে ভ্রমণ করাঃ আমাদের বাংলাদেশে এমন অনেক জনপ্রিয় স্থান রয়েছে যেখানে আমাদের যাওয়া হয়নি আমার এবারের ছুটি এমন কিছু স্থানে ঘুরে আসতে পারি। বাংলাদেশে এমন কয়েকটি স্পট আছে যেগুলো পর্যটকদের কাছে অনেক আকর্ষণীয়। এমন কিছু পছন্দীয় স্থানে নাম ও বিবরণ জানবো।

কক্সবাজার : শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। আমাদের সকলের পচ্ছন্দের তালিকায় সবার উপরে থাকে। ১২০ কি.মি দীর্ঘ প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকতে শুধু  দেশি পর্যটকই নয় বিদেশিদের পচ্ছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

এ সমুদ্র সৈকতের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো সমুদ্র সৈকতটি বালুকাময়, কাদার অস্তিত্ব পাওয়া য়ায় না। কক্সবাজার সৈকতের গড়ে জোয়ার 200 - ৪০০ মিটার। তবে সাবধান, ভাটার সময় চোরাবালি জেগে উঠে তাই বিপদজনক হয়ে উঠে।

সৈকতের বিভিন্ন অংশঃ  সৈকতে চারিদিকে ছড়িয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ আপনার নজর কাড়তে ও আপনার চক্ষু শীতল করবে  নিমিষেই।

দুর থেকে সমুদ্র সৈকত

কলাতলী পয়েন্টঃ চাঁদনী রাতে প্রিয় মানুষের হতে হাত রেখে হাঁটা সত্যি রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে । কলাতলী বিচে মানুষ গোসল করে, সাতর কাটে। এছাড়ও কলাতলী বিচে নান ধরনের খাবার রেস্টুরেন্ট সহ অনেক পর্যটন সুবিধা রয়েছে।

লাবনী পয়েন্টঃ সি বিচ যা লাবনী পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। আমরা মুলত সি বিচ দেখতেই আসি যা মূলত লাবনী পয়েন্ট। কক্সবাজার শহর থেকে কাছে হওয়ায় লাবনী পয়েন্ট কে মুলত প্রধান সমুদ্র সৈকত বিবেচনা করা হয়।

দরিয়ানগর সৈকতঃ প্যারাসেলিংয়ের জন্য দরিয়ানগন সৈকত বেশ জনপ্রিয়।  হিমছড়ি জাতীয় পার্কের কাছে দরিয়ানগর সৈকত অবস্থিত।

সূর্যাস্তের সময় কক্সবাজার,

ইনানী সৈকতঃ কক্সবাজর জেলার উখিয়া অবস্থিত। 18 কি.মি দীর্ঘ । সবুজ ও কালো বর্ণের প্রবাল পাথর পাওয়া যায়।

সুগন্ধা পয়েন্টঃ আপনি যদি মাছ খেতে পচ্ছন্দ করেন তাহলে আপনাকে যেতে হবে সুগন্ধা পয়েন্ট কেননা এখানে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের তৈরি খাবার রেস্টুরেন্ট আছে।

টেকনাফ সৈকতঃ এ সৈকত অন্যান্য সৈকতের থেকে আলাদা। গাছগাছলি পরিপূর্ণ টেকনাফ সৈকত। 

সেন্টমার্টিনঃ সমুদ্রের নীল জলরাশি আর নিরিবিলি সময় কাটাতে আপনি যেতে পারেন সেন্টমাটিন। কক্সবাজার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ একে অনেকে নারেকেল জিঞ্জিরা বলে। ৮ বর্গ কি.মি.  এই দ্বীপটি একদিনে পায়ে হেটে ঘুরে আসা যায়।

বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ

খাগড়াছড়িঃ এই স্থানটি বাংলাদেশ ও বিদেশি পর্যটকদের পচ্ছণন্দর তালিকায় সবার উপরে। এখানে নদী, পাহাড় ঝর্ণা দেখতে পাওয়া যায়।
সিলেটঃ চা বাগানের জন্য বিখ্যাত সিলেট। উত্তর-পূর্ব  জেলায় অনেক চা বাগান দেখতে পাওয়া যায়। পর্যটকদের কাছে সিলেটের অনেক পচ্ছন্দের তাকিায় রয়েছে- জাফলং, বিছানাকন্দি, রাতারগুল। এ জেলায় ছোট- বড় মিলেয়ে মোট ৮২ টি হাওর বিল রয়েছে।


মৌলভীবাজার : বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট বিভাগে মৌলভীবাজার অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সুন্দর, আধুনিক ও মানসম্পন্ন নাগরিক সুবিধা সম্মত উপজেলা। মৌলভীবাজারে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হাম হাম জলপ্রপাত, পৃথিম পাশা জামে মসজিদ, শ্রীমঙ্গল চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্দ্যান, মাধবপুর হ্রদ।


কুয়াকাটা : বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ‍উপজেলায় অবস্থিত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের  বৈশিষ্ট্য হলো ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকে সুর্যোদয় ও সূযাস্ত দেখা যায়। কুয়াকাটার আরেক নাম সাগর কন্যা। শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখি দেথা যায় এখানে।

কম খরচে ভ্রমণের কার্যকর পদ্ধতি

দেশ বা দেশের বাইরে যেখানে ভ্রমণ করুন না কেন কিছু ট্রিকস অবলম্বন করলে ভ্রমণ খরচ ৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব। আসুন জেনে নেই কিছু কৌশল যা অনুসরণ করলে কম খরচে ভ্রমণ করা সম্ভব।

অফ পিক সিজনে ভ্রমণ করুনঃ আপনি যখন দেশ বা বিদেশ যেখানে ভ্রমণ করুন না কনে চেষ্টা করুন অফ পিক সিজনে ভ্রমণ করতে কেননা, অফ পিক সিজনে তুলনামূলক খরচ কম হবে। পিক সিজনে ভ্রমণ করলে খরচ তিন থেকে চার গুন বেড়ে যাবে। অফ পিক সিজনে যেখানে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে হোটেল রুম ভাড়া পাবেন সেখানে পিক সিজনে হোটল রুমের ভাড়া গিয়ে ঠেকে ১৫০০ -২০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া পিক সিজনে পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে প্রচুর ভীড় থাকে এবং টিকিট, খাবার সহ সকল কিছুর দাম বেশী থাকে। তাই অফ পিক সিজনে ভ্রমণ করতে চেষ্টা করুন।

প্রি প্ল্যান ও প্রি বুকিংঃ কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে সেই জায়গা সম্পর্কে আগে থেকে খোজ খরব নিয়ে ঘুরবার একটা কাল্পনিক চিত্র মনে  মনে ধারণ করা জুরুরী। এতে খরচ ও স্থান সম্পর্কে ভালো ধারণা করা যায়। প্রি প্ল্যান করলে খরচ কমানো ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো যায়। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন এ কাজ গুলো অনেক সহজ হয়ে গেছে।

প্রি বুকিং ভ্রমণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একদিন বা দুইদিন অথবা আরো বেশি সময়ের ভ্রমণে হোটল মোটেল প্রি বুকিং করা জরুরী। এজন্য হোটেল-মোটেল সম্পর্কে আগে ভাগে খোঁজ-খরব রাখা বা সংগ্রহ করা এবং বুর্কিং দেওয়ার কাজটি করে রাখতে হবে।

সব নিজে করবার চেষ্টা করুনঃ প্রি বুকিং বা ট্রেন, বাস টিকিট কাটা থেকে ‍শুরু করে সব কাজ আপনি নিজে করুন এতে আপনার খরচ অনেক কমে যাবে। হোটেল বুকিং, ট্রেন বা বিমান টিকিট থেকে সব কিছু সহজ করার জন্য আশে পাশে অনেক ট্রাভেল এজেন্সি আছে যারা আপনার ঝামেলা কমাবার জন্য আপনার চাহিদার সব কিছুর ব্যবস্থা করে দেবে। তবে মনে রাখতে হবে এসব এজেন্সি হোটেল , পরিবহণ কোম্পানী থেকে কমিশন নিয়ে থাকে এতে আপনার স্বার্থের থেকে তাদের স্বার্থ বেশী দেখে ফলে আপনার খরচ বেড়ে যেতে পারে। তাই সব কাজ আপনি করুন এবং নিজে খোজ নিন এবং দরদাম করুন এতে আমার খরচ অনেক কমে যাবে।

দলীয়ভাবে বেড়ানো প্লান করুনঃ যেকোন জায়গায় বেড়াতে গেলে চেষ্টা করুন দল বেধে ভ্রমণ করতে। এতে যেমন খরচ কম হবে তেমনি আনন্দ বেশী হবে। সেই সাথে বাড়তি নিরাপত্তা পাওয়া যাবে।

শুকনো খাবার ও পানি সাথে রাখুনঃ যেকোন জায়গায় বিশেষ করে দুর্গম কোন স্থানে বেড়াতে গেলে অবশ্যই কিছু শুকনা খাবার সাথে রাখুন। যেমনঃ মুড়ি, চিপস, পানি, মেডিসিন  ইত্যাদি। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সব খাবারের দাম একটু বেশী থাকে তাই খরচ কমাতে নিজের খাবার নিজের কাছে রাখুন।

রাতে ভ্রমণ করুনঃ ভ্রমনে যেতে যদি সাত/আট ঘন্টার যাত্রা পথ হয় তাহলে রাতে ভ্রমণ করুন। এতে পরবর্তী ভ্রমণের জন্য একদিন বেশী পাওয়া যাবে। সবথেকে বড় কথা এক রাতের হোটেল ভাড়া বেচে যাবে।

সর্বপরি, আমরা ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার একটা গাইডলাইন পেয়ে গেলাম। আশা করছি আপনারাদের অনেক ‍উপকার হবে। একটি কথা অবশ্যই মনে রাখবেন সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করেবেন এবং অন্যকে সাহায্য করবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url